Chairman's Message
সভাপতির বক্তব্য: মানুষের কর্মদক্ষতা অর্জনের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। শিক্ষা হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যার মাধ্যমে মানুষ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সাধন করতে পারে। ধ্রুপদী অর্থনীতিবিদ এ্যাডাম স্মিথ মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্ব অকপটে স্বীকার করেছেন। একইভাবে ডেবিড রিকার্ভো, জন স্টুয়ার্ট মিল এবং আলফ্রেড মার্শাল প্রমুখ অর্থনীতিবিদগণ শিক্ষাকে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, কাজের উদ্দীপনা ও নিপুণতা বাড়ানোর উপাদান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ শিক্ষাকে দেখেছেন জীবনেরই এক অতি আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ হিসেবে। তিনি বলেছেন- শিক্ষা জিনিসটা তো জীবনের পথে আমরা কীহইব এবং কী শিখিব এ দুটি কথা একেবারে গায়ে গায়ে সংলগ্ন। আর এ সকল কারণেই একটি গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মহান লক্ষে আমরা চিটাগাংআইডিয়্যাল হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু আমরা শুরুলতেই লক্ষ করি যে, আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা রয়েছে। যেমনঃ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের স্থানাভাব, বিদ্যালয়ের জরাজীর্ণ কাঠামো ও অতি অনাকর্ষণীয় পরিবেশ, বিদ্যালয়ে শিক্ষা উপকরণের অভাব, শিক্ষক স্বল্পতা ও শিক্ষাদানের নিম্নমান, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও তদারকি ব্যবস্থা, অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব ইত্যাদি। তাই স্কুলের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উক্ত সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। শিক্ষার লক্ষ অর্জনের জন্য আমরা শিক্ষার্থীদের দিয়েছি আধুনিক দশতলা বিশিষ্ট একটি বিদ্যালয় ভবন, মানসম্মত শিক্ষা সরঞ্জামের কম্পিউটার ল্যাব, গ্রন্থাগার, সুসজ্জিত বিজ্ঞান ল্যাব, নিয়োগ দিয়েছি যোগ্য দক্ষ শিক্ষক, পাঠদানে এনেছি নতুনত্ব ও গতিশীলতা, সার্বক্ষণিক মনিটরিং, প্রেষণার ব্যবস্থা এবং অব্যাহত আছে ধারাবাহিক মূল্যায়ন প্রক্রিয়া। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থী সংখ্যা এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, তাদের কর্মকালীন সঞ্জীবনী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা এবং শিক্ষকদের দিয়েছি তাদের আকাঙ্খিত বেতন কাঠামো।আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। যাতে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা কমে আসে এবং সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের জন্য বাঞ্ছিত মূল্যবোধ গড়ে তুলতে। আধুনিক, বিজ্ঞান মনস্ক, নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ শিক্ষার্থী গড়ে তোলাকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ, নিজ জীবনদৃষ্টি, অতীত ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর আগামী দিনের স্বপ্ন নিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা গড়ে উঠবে তাইতো আমরা চাই। সকল আন্তর্জাতিক শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেছেন একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ পন্থা হল সে দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করা, আর তাই প্রধানত শিক্ষাকেই এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। সেজন্যই আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব পালনে উদ্ধুদ্ধ হয়েছি। বর্তমানে বিশ্ব ক্রমশ প্রযুক্তি নির্ভর সমাজে পরিণত হতে চলেছে। তাই আমরা চাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সঞ্চারিত হোক অনুসন্ধান ও গবেষণার প্রবণতা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানের প্রেরণা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক চেতনা ও কর্মোদ্যোগ সঞ্চারকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদেরকে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত করতে আমরা সচেষ্ট। সেজন্যই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন, (Student Evaluation) প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যবস্থা মূল্যায়ন, (Institutional Evaluation) কার্যক্রম মূল্যায়ন (Programme Evaluation) কর্মকর্তা কর্মচারী ব্যবস্থাপনার মূল্যায়ন (Personal Evaluation) ইত্যাদির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাতা-গ্রহীতার সম্পর্ক ঠিক রেখে কার্য সম্পাদনের জন্য যেমনি নেতার প্রয়োজন তেমনি ভাল শিক্ষকেরও প্রয়োজন। নেতা, সুশিক্ষক, উত্তম পাঠদান, সচেতন অভিভাবক, সকলের আšÍরিক সহযোগিতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোন পরিবর্তন আনয়নে সক্ষম। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে নিরলস পরিশ্রম অব্যাহত রেখেছি। গুণগতমান উন্নয়নের প্রক্রিয়াগুলো আরো উন্নতর পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত আমরা অনুশীলন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাব। আমরা চেষ্টা করছি প্রতিযোগিতামূলক লক্ষকে সামনে রেখে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে। মানুষের মননশীলতা ও সৃজনশীলতা বিকাশে কাজের স্বীকৃতি বড় ধরনের সাহায্য করে। তাই আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানে ভাল কাজের স্বীকৃতি দিয়ে থাকি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমাজের অঙ্গ, সমাজের কল্যাণার্থে প্রতিষ্ঠান। তাই আমাদের ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হল সমাজের কাঙ্খিত চাহিদা পূরণ করা। ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিত্য নতুন কলাকৌশল প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানকে উর্ধ্বমুখী করে তোলাই আমাদের স্বপ্ন। পরিমাপ ও ফলাবর্তন প্রক্রিয়া ব্যবহার করে পদ্ধতিগতভাবে প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন সুব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত আমরা সকলে একটি পরিবারের অংশ হিসেবে কাজ করে চলেছি। আমরা বিশ্বাস করি কার্যকরী যোগাযোগ পরস্পরের মধ্যে সুন্দর বন্ধন সৃষ্টি করে। তাই দলীয় কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করা আমাদের উদ্দেশ্য। ভাল ব্যবস্থাপনা ভাল শিক্ষার পূর্বশর্ত। প্রতিষ্ঠানের জন্য সুন্দর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এমনিতে গড়ে ওঠে না, তার জন্য অনেক শ্রম ও সময় দিতে হয়। আমরা তা দিতে চেষ্টা করছি এবং আশা রাখি প্রতিষ্ঠানের সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা গ্রহণ করে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবে। যদি তাই হয় তবে ভাল কাজের শিখনফল (Learing Outcome) অবশ্যই কল্যাণধর্মী হবে।